বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ খুলনা সদরের মিস্ত্রিপাড়ায় ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলীর ছোড়া গুলিটি ছিলো পয়েন্ট থ্রি নট থ্রি পিস্তলের। চাঁদাবাজদের উদ্দেশ্যে করা ঠিকাদারের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বিদ্ধ হয় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লামিয়ার পায়ে। এ ঘটনায় নিজেকে বাঁচাতে উল্টো মামলা করলেন ওই ঠিকাদার।
শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে ওই স্কুলছাত্রীর বাম পায়ে গুলি লাগলেও গুলিটি উরুতে আটকে যাওয়ায় শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত অস্ত্রোপাচার করা যায়নি। লামিয়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, মিস্ত্রিপাড়া আরাফাত জামে মসজিদের পাশের বাবু খান রোডের সংস্কারের কাজ পান মিস্ত্রীপাড়ার বাসিন্দা ইউসুফ আলী সরদার। কিছু দুষ্কৃতকারী এই কাজটির জন্য চাপ দিচ্ছিল। দুষ্কৃতকারীরা কাজটা কিনতে চায়। তারা ইউসুফ আলীর বাড়ির সামনে গেলে তিনি দুই রাউন্ড গুলি করেন। একটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পাশের বাড়ির ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া লামিয়ার পায়ে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
লামিয়া আরাফাত জামে মসজিদ এলাকার জামাল হোসেনের মেয়ে ও ইকবালনগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
ঠিকাদার ইউসুফ আলীর দাবি, তার গুলিতে নয়; চাঁদা নিতে আসা চার দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছে লামিয়া। এ ঘটনায় নিজের প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগ এনে খুলনা সদর থানায় মামলা করেছেন তিনি। যদিও পুলিশ ও লামিয়ার স্বজনরা বলছে, ঠিকাদারের ছোড়া গুলিই স্কুলছাত্রীর পায়ে বিদ্ধ হয়েছে।
লামিয়ার মামা তরিকুল ইসলাম জানান, আগে লামিয়ার অস্ত্রোপাচারকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। মামলার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি পরিবার। হাসপাতালে গিয়ে লামিয়াকে হাসপাতালে দেখে এসেছেন ঠিকাদার ইউসুফ আলী। চিকিৎসার সব খরচ বহনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
লামিয়ার নানা হাবিবুর রহমান বলেন, এক বছর বয়সে লামিয়াকে ফেলে চলে যায় তার বাবা। এরপর থেকে তার মা আমার সংসারে থেকে অন্যের বাসায় কাজ করে জীবন চালাচ্ছে। অসহায় মেয়েটি হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। কখন পা থেকে গুলি বের করা হবে জানি না।
খুমেক হাসপাতালের রেজিস্ট্রার মিল্টন মল্লিক বলেন, লামিয়ার বাম পায়ের উরুর হারে গুলিটি আটকে আছে। সেখানে একটা ফ্র্যাকচারও হয়েছে। এ কারণে অস্ত্রোপাচার করা যাচ্ছে না। বিষয়টি অর্থোপেডিক্স বিভাগকে জানানো হয়েছে। সার্জারি ও অর্থোপেডিক্স বিভাগ যৌথ মেডিক্যাল টিম গঠন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
খুমেক হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, লামিয়ার যেখানে গুলি লেগেছে সে জায়গাটি অনেক সেনসেটিভ। অনেক রক্ত নালী রয়েছে সেখানে। যার জন্য থ্রি-ডি সিটি স্ক্যান ও আল্ট্রাসোনোগ্রাম করতে দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বোঝা যাবে অপারেশন করা যাবে কি না।
অভিযুক্ত ঠিকাদার ইউসুফ আলী জানান, ঠিকাদারি একটি কাজ নিয়ে চার যুবক তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার এক পর্যায়ে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিলে তিনি পিস্তল নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। এ সময় পিস্তলে তিন রাউন্ড গুলি ছিল। তিনি দুই রাউন্ড গুলি করেন। ওই চার যুবকও দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলি করেছিলো। তাদের গুলি লামিয়ার পায়ে বিদ্ধ হয়েছে।
কেএমপির ডিসি (দক্ষিণ) মো. শাকিলুজ্জামান বলেন, ইউসুফ আলীর পিস্তলটি লাইসেন্স করা। তবে অন্যের গুলিতে নয়, তার গুলিতেই আহত হয়েছে স্কুলছাত্রী।
খুলনা সদর থানার ওসি মো. আশরাফুল আলম বলেন, ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলী চারজন অজ্ঞাতনামা চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। এ ঘটনায় ব্যবহৃত পিস্তল, অব্যবহৃত ১০ রাউন্ড গুলি ও দুই রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।
Leave a Reply